যানজটে দেরি, পরীক্ষা দিতে পারলেন না এসএসসি পরীক্ষার্থী
বেগমগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
রাস্তায় যানজটের কারণে পরীক্ষা হলে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে পারেননি নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভার গনিপুর গার্লস হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা শান্তা। এ কারণে তাকে পরীক্ষায় বসতে দেননি কেন্দ্র সচিব।
গত মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন রসায়ন পরীক্ষা ছিল। আর কেন্দ্র সচিব হলেন বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান।
ছাত্রীটির অভিভাবক ও তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এই ঘটনার জন্য কেন্দ্র সচিবকে দায়ী করে বিশেষ ব্যবস্থায় তার রসায়ন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন। তবে কেন্দ্র সচিব এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পরীর্ক্ষীর মা রাবেয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে অনেক মেধাবী। পরীক্ষার আগে সে অনেক পড়াশোনা করছে। গত পাঁচদিন ধরে সে জ্বর সর্দি কাশি ও বমিতে আক্রান্ত হলে তাকে সোমবার বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করাই। অসুস্থ শরীর নিয়েই সে গত ১৪ নভেম্বর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষায় সে সবগুলো উত্তর লিখেছে। মঙ্গলবার সকালে তাকে নিয়ে রসায়ন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার হলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হই। চৌমুহনীতে দীর্ঘ যানজট থাকার কারণে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে ১৫ মিনিট দেরি হয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রে প্রবেশের পর কেন্দ্র সচিব আবদুল মন্নান আমার মেয়েকে বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করে একবার নিচতলা আরেক বার দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। এভাবে আরো ১৫ মিনিট সময় নষ্ট করে আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর আমি ও আমার মেয়ে কেন্দ্র সচিবের কাছে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি কর্নপাত করেননি। পরীক্ষা দিতে না পেরে এক পর্যায়ে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এদৃশ্য দেখে গনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া এগিয়ে এসে কেন্দ্র সচিবকে ছাত্রীটিকে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কারও কথাই রাখেননি। পরীক্ষা দিতে না পেরে গত দুইদিন যাবত সে শুধুই কান্নাকাটি করছে। কোন কিছুই খাচ্ছে না।
রাবেয়া সুলতানা আরও বলেন, করোনার কারণে সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি উদার মানসিকতার পরিচয় দিলেও কেন্দ্র সচিব কি কারণে আমার মেয়ের প্রতি এত কঠোর হলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আগামী ২২ তারিখ তার জীববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে ওই পরীক্ষায় অংশ নেবে।
তাই বিশেষ ব্যবস্থায় তার মেয়ের রসায়ন পরীক্ষা গ্রহণ করা জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
গনিপুর গালর্স হাইস্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া বলেন, দীর্ঘ যানজটে পড়ে ছাত্রীটি কেন্দ্রে পৌঁছাতে ১৫-২০ মিনিট দেরি হয়েছে। কিন্তু তার তো পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি আমার কথা রাখেননি। ছাত্রীটি অনেক মেধাবী। সে ৩০ মিনিট লেখার সুযোগ পেলেও ভাল ফলাফল করত।
তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ছাত্রীটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব আবদুল মান্নান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মেয়েটি ৪০ মিনিট পর কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। তাই তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার নিয়ম। তবে কেউ দেরি করে আসলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও দেরির কারণ কেন্দ্র সচিবকে জানাতে হবে। কেন্দ্র সচিব দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা কেন্দ্র সচিব প্রতিদিন বোর্ডকে জানাবে। তবে দেরি করে এলে যে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া যাবে না, এটা ঠিক নয়।