ঢাকা ০২:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাটখিলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়

 

জি এইচ সৈকতঃ
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচ ও প্রাকটিক্যাল ফি’র নামে অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী বিনা রশিদে অর্থ আদায় করছে। বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে প্রবেশ পত্র না দেওয়া এবং প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা । তবে সন্তানদের পরীক্ষার ফলাফলে সমস্যা হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ করতে অনীহা জানিয়েছেন অভিভাবকরা ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাটখিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ পত্র দিতে মানবিক বিভাগের ৬৭জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫০টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের ১৮জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪৫০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র ভীমপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। কেন্দ্র সচিব ভীমপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বাতেনের নির্দেশে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব টাকা উত্তোলন করেছি। একই কেন্দ্রের অধিনে উপজেলার হাটপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ জানান, তার বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০০টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৫০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। তিনিও কেন্দ্র সচিবের নির্দেশে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।

এদিকে নারায়নপুর হাইস্কুলের অভিভাবক নোয়াখলা গ্রামের জালাল আহমেদ জানান, এই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০টাকা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৫০টাকা করে আদায় করেছে। পরকোট দশঘরিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৫০০টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৩০০টাকা করে আদায় করার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাতে গনা দুই-চারটি ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠানে প্রবেশপত্র দেওয়াকালীন কেন্দ্র খরচ ও প্রাকটিক্যাল খাতার নামে অর্থ আদায় করেছে। অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফরম পূরণের সময় কেন্দ্র ফি নেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন আবার কেন্দ্র খরচ কি বা কেন নেওয়া হয়। যেখানে করোনা পরবর্তী মানুষের চরম অভাব-অনটন চলছে সেখানে শিক্ষার্থীদের থেকে এসব অবৈধ অর্থ আদায় চরম হয়রানি আর ভোগান্তি। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পিছনে যে ব্যয় করতে হয় তার কারনে কেন্দ্র খরচের নামে অর্থ আদায় করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ভীমপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আবদুল বাতেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কেন্দ্র খরচের টাকা আদায়ের নির্দেশ অস্বীকার করলেও তার কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

চাটখিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারনত ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্বোর্তন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ জানানো হবে।

পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অবৈধ অর্থ আদায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Noakhalir Patrika

প্রকাশক সম্পাদক গুলজার হোসেন সৈকত সার্বিক যোগাযোগ 01711577700 gulzar.shykot@gmail.com
জনপ্রিয় সংবাদ

আলোচিত সেই ভাইরাল ভিডিও,সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচার, নোয়াখালীর সেই নারীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী

চাটখিলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়

আপডেট সময় ০৪:৪০:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১

 

জি এইচ সৈকতঃ
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র খরচ ও প্রাকটিক্যাল ফি’র নামে অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী বিনা রশিদে অর্থ আদায় করছে। বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে প্রবেশ পত্র না দেওয়া এবং প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা । তবে সন্তানদের পরীক্ষার ফলাফলে সমস্যা হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশ করতে অনীহা জানিয়েছেন অভিভাবকরা ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাটখিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ পত্র দিতে মানবিক বিভাগের ৬৭জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫০টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের ১৮জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪৫০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইমরান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্র ভীমপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। কেন্দ্র সচিব ভীমপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল বাতেনের নির্দেশে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসব টাকা উত্তোলন করেছি। একই কেন্দ্রের অধিনে উপজেলার হাটপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ জানান, তার বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০০টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৫০টাকা করে আদায় করা হয়েছে। তিনিও কেন্দ্র সচিবের নির্দেশে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করেছেন।

এদিকে নারায়নপুর হাইস্কুলের অভিভাবক নোয়াখলা গ্রামের জালাল আহমেদ জানান, এই স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০টাকা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩৫০টাকা করে আদায় করেছে। পরকোট দশঘরিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৫০০টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৩০০টাকা করে আদায় করার অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি ৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাতে গনা দুই-চারটি ছাড়া অন্য সব প্রতিষ্ঠানে প্রবেশপত্র দেওয়াকালীন কেন্দ্র খরচ ও প্রাকটিক্যাল খাতার নামে অর্থ আদায় করেছে। অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফরম পূরণের সময় কেন্দ্র ফি নেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন আবার কেন্দ্র খরচ কি বা কেন নেওয়া হয়। যেখানে করোনা পরবর্তী মানুষের চরম অভাব-অনটন চলছে সেখানে শিক্ষার্থীদের থেকে এসব অবৈধ অর্থ আদায় চরম হয়রানি আর ভোগান্তি। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পিছনে যে ব্যয় করতে হয় তার কারনে কেন্দ্র খরচের নামে অর্থ আদায় করা হয়।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ভীমপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আবদুল বাতেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কেন্দ্র খরচের টাকা আদায়ের নির্দেশ অস্বীকার করলেও তার কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি।

চাটখিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারনত ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের অবৈধভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উদ্বোর্তন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ জানানো হবে।

পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অবৈধ অর্থ আদায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।