ঢাকা ০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লক্ষ্মীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্বিচার গুলির জেরে সংঘাত, নিহত ১১,আহত অর্ধ শতাধিক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ রোববার আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতজন ক্ষমতাসীন দলের এবং চারজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী। আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন টিপু আন্দোলনকারীদের লক্ষ করে নির্বিচারে গুলি করেন। পরে আন্দোলনকারীরা দুপুর ২টার দিকে তার শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার বাসা ঘেরাও করলে ফের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেন তিনি। এতে শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা টিপুর বাসায় পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
নিহতদের মধ্যে আফনান পাটওয়ারী, কাউছার, সাব্বির ও মিরাজের নাম জানা গেছে। এর মধ্যে আহত অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে আফনান মারা যায়। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে দুই ইউপি সদস্যও রয়েছেন। তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এদিকে আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় এখনো জ্বলছে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবু তাহের মিয়ার বাড়ি।
এ বাড়িতে থাকেন তার ছেলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এগিয়ে এলেও তাদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কাছেই সদর থানা থাকলেও পুলিশও দাঁড়িয়ে ছিল। অপরদিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরে শত শত ব্যবসায়ীকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। শহরের উত্তর তেমুহনীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং মাদাম ব্রিজ ও ঝুমুর এলাকায় আন্দোলনকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। এসময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এসে অবস্থান নেন। আর শিক্ষার্থীরা ছিলেন মাদাম ব্রিজ থেকে ঝুমুর এলাকা পর্যন্ত।

সদর হাসপাতালে আরএমও অরুপ পাল বলেন, অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছি। তারা গুলিবিদ্ধ। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ হীরা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ঝুমুর অতিক্রম করছিলাম। এ সময় জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। গুলিও করেছে। চাপাতি দিয়ে আমাদের অনেককে কুপিয়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঝুমুর এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে। আমাদের অনেকজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে সদর মডেল থানা ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

Noakhalir Patrika

প্রকাশক সম্পাদক গুলজার হোসেন সৈকত সার্বিক যোগাযোগ 01711577700 gulzar.shykot@gmail.com
জনপ্রিয় সংবাদ

আলোচিত সেই ভাইরাল ভিডিও,সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচার, নোয়াখালীর সেই নারীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর স্বামী

আপডেট সময় ০৭:২৫:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্বিচার গুলির জেরে সংঘাত, নিহত ১১,আহত অর্ধ শতাধিক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ
লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ রোববার আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতজন ক্ষমতাসীন দলের এবং চারজন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী। আহত হয়েছে অর্ধ শতাধিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিন টিপু আন্দোলনকারীদের লক্ষ করে নির্বিচারে গুলি করেন। পরে আন্দোলনকারীরা দুপুর ২টার দিকে তার শহরের তমিজ মার্কেট এলাকার বাসা ঘেরাও করলে ফের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করেন তিনি। এতে শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারীরা টিপুর বাসায় পেট্টোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
নিহতদের মধ্যে আফনান পাটওয়ারী, কাউছার, সাব্বির ও মিরাজের নাম জানা গেছে। এর মধ্যে আহত অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে আফনান মারা যায়। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে দুই ইউপি সদস্যও রয়েছেন। তারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এদিকে আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় এখনো জ্বলছে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবু তাহের মিয়ার বাড়ি।
এ বাড়িতে থাকেন তার ছেলে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা এগিয়ে এলেও তাদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কাছেই সদর থানা থাকলেও পুলিশও দাঁড়িয়ে ছিল। অপরদিকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরে শত শত ব্যবসায়ীকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

এদিন দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে ও মাদাম ব্রিজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। শহরের উত্তর তেমুহনীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং মাদাম ব্রিজ ও ঝুমুর এলাকায় আন্দোলনকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। তারা পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। এসময় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেছেন আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে শহরের উত্তর তেমুহনী এলাকায় এসে অবস্থান নেন। আর শিক্ষার্থীরা ছিলেন মাদাম ব্রিজ থেকে ঝুমুর এলাকা পর্যন্ত।

সদর হাসপাতালে আরএমও অরুপ পাল বলেন, অর্ধশতাধিক আহত রোগীকে হাসপাতাল আনা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনকে মৃত পেয়েছি। তারা গুলিবিদ্ধ। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ হীরা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ঝুমুর অতিক্রম করছিলাম। এ সময় জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। গুলিও করেছে। চাপাতি দিয়ে আমাদের অনেককে কুপিয়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ঝুমুর এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে। আমাদের অনেকজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালেও নেওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে সদর মডেল থানা ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদারকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।