নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ
বছরখানেক ধরে রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায় নিয়ম করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে আসছিলেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে তো কিছু নেই! সে কথা আবার প্রমাণ করলেন কাদের মির্জা।
এখন তিনি সুর পাল্টে বলছেন, তার সবচেয়ে ভুল হয়েছে বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলা।
‘সত্যবচনের’ বর্ষপূর্তিতে মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি এ কথা বলেন।
২০ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভে কাদের মির্জা বলেন, ‘২০২০ সালের ৯ নভেম্বর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘোষণা করি, আমি যত দিন বেঁচে থাকব, অন্যায়, অবিচার ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলব। সেই সত্যবচনের ব্রত নিয়ে দীর্ঘ একটি বছর পার করলাম।’
ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য অনুতপ্ত জানিয়ে কাদের মির্জা বলেন, ‘মানুষ ভুল করবে, এটাই স্বাভাবিক; কেউ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। গত এক বছরে আমার সবচেয়ে যে ভুল ছিল, তা হলো আমি আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বাংলাদেশে একজন সফল, সৎ রাজনীতিবিদ জননেতা ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমি সত্যি অনুতপ্ত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা। ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-৫ আসনের (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা) সংসদ সদস্য।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার সময় গত জাতীয় নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগসহ আওয়ামী লীগ ও দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে অপরাজনীতির অভিযোগ তুলে আলোচনায় আসেন কাদের মির্জা। এরপর তার ওই কথাকে ‘সত্যবচন’ অভিহিত করেন অনেকে। জাতীয় রাজনীতিতেও কাদের মির্জার কথাবার্তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। তবে এতে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভক্তি দেখা দেয়। এর জেরে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।
কাদের মির্জা বলেন, ‘সাহস করে সত্য বলার এই সংগ্রামে দেখলাম, বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নেই। প্রায় সব কটি দপ্তরই কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হলো পুলিশ প্রশাসন। আমার প্রতিবাদের পর দুর্নীতিগ্রস্ত সাবেক সেতুসচিব বেলায়েতের এক্সটেনশন (মেয়াদ বৃদ্ধি) না হওয়াও দুর্নীতিবাজ আমলাদের জন্য একটি হুঁশিয়ারি সংকেত।’
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ভোট ও নির্বাচনের পদ্ধতি নষ্ট করে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা জনগণের সব অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ভোটাধিকারও প্রতিষ্ঠা করেছেন। জিয়াউর রহমানের সময়ে মানুষের ভোটাধিকার নষ্ট করা হয়েছিল। তারা আবার (বিএনপি) ভোটাধিকারের কথা বলে। বিএনপির নেতৃত্ববিহীন আন্দোলন অতীতেও সফল হয়নি, এখনো হবে না।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘দেশ এখন সংসদীয় পদ্ধতিতে চলছে, প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৭৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবেন। দেশের যে কোনো সংসদীয় আসনেও তিনি নির্বাচন করলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। যতদিন বেঁচে থাকব, সাহস করে সত্য কথা বলব এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে বলেই যাব।’