জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, গত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আর শুধুমাত্র গত বছরেই বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি।
সংস্থাটির পরিসংখ্যানে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্য এবং ভোজ্যতেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবরে প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পর ভোজ্যতেলের মূল্য এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ছুঁয়েছে।
এফএও বলেছে, বিশ্বজুড়ে সরবরাহ বিঘ্ন, পণ্যের উচ্চ মূল্য, কারখানা বন্ধ এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা দাম বাড়াতে সাহায্য করছে। এছাড়া খাদ্যপণ্যের দামের পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে ২২ শতাংশ বেশি বেড়েছে।
কানাডা, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান রফতানিকারক দেশগুলোতে গমের উৎপাদন কমে গেছে। যে কারণে গত ১২ মাসে প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে গমের দাম অন্যান্য খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিজনেস স্কুলের কৃষিবিদ পিটার ব্যাট বিবিসিকে বলেছেন, খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে আমরা এমন এক ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছি, যেখানে যে কেউ বলতে পারে যে— জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন হ্রাস হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অনেক জায়গায় (ফসলের) অত্যন্ত খারাপ বছর কেটেছে।’ এফএও বলেছে, পাম, সয়া, সূর্যমুখী এবং সরিষা তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোজ্যতেলের দামের সূচক বেড়েছে।
জাতিসংঘের কৃষিবিষয়ক এই সংস্থা বলেছে, চলমান অভিবাসী শ্রমিক ঘাটতির কারণে মালয়েশিয়ায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে পাম অয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য অংশেও খাদ্যপণ্য উৎপাদন এবং পরিবহন খরচ বাড়াতে সহায়তা করেছে।
ব্যাট বলেছেন, ‘অন্য যে সমস্যাটি দেখা দিয়েছে তা হলো পণ্যের সরবরাহ। যেমন, অস্ট্রেলিয়ায় খাবার পরিবহনের জন্য আমাদের প্রচুর জাহাজ এসেছিল; কিন্তু কোভিডের কারণে আমরা ক্রু পাইনি।’
গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এফএও বলেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বৈশ্বিক পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটায় তা দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্যের ব্যয় বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে।
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রিজিট বুসিচিয়া বিবিসিকে বলেছেন, ‘বিশ্ববাজারে নানা ধরনের গুঞ্জনও খাদ্যদ্রব্যের দামের অস্থিরতায় ভূমিকা রাখছে। পণ্যের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ফলে ১৯৯০-এর দশক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এই বাজারে বৃহৎ পরিসরে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে।’
খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটিও বিশেষ প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, মিসর অথবা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশও তাদের খাদ্যশস্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উত্তেজনার মুখোমুখি হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বুসিচিয়া বলেছেন, খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দাম সাধারণত দরিদ্রদের তীব্রভাবে নাড়িয়ে দেয়। কারণ এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলোকে আরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয় এবং এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি।