চাটখিল প্রতিনিধিঃ
২০২৪ সালের ( ৫ আগস্ট) নিজের গুলিতে প্রাণ হারানো মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ (২২) এর মৃত্যুর ৯ মাস পর তার বাবা মো. হাবিবুর রহমান গত বুধবার নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি- না বা কোনো তদন্ত চলছে কি না , তা ৭ কর্মদিবসের মধ্যে চাটখিল থানা পুলিশকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে বাদীর আইনজীবি সাফায়েত উল্যাহ কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আদালতের অভিযোগের কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই মামলাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগে সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ উল্যা, ভিপি নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হুদা শাকিল, বেলায়েত হোসেন, শাহজাহান বাবুল, বজলুর রহমান লিটন, রাজিব হোসেন রাজু, আলী তাহের ইভুসহ ৫৭ জন এবং আরো অজ্ঞাত নামা ৭০/৮০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইমতিয়াজ হোসেন একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছিলেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে, ৫ আগস্ট সকাল থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। সেই দিন বিকেলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবরের পর ছাত্র ও সাধারণ জনগণ চাটখিল উপজেলায় একটি আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলটি চাটখিল-রামগঞ্জ মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ প্রান্তে পৌঁছালে ছাত্র ও সাধারণ জনগণ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের পথে রওনা হয়। তখন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ইমতিয়াজকে গুলি করে আহত করে। আহত ইমতিয়াজকে প্রথমে চাটখিল পরে নোয়াখালীতে শেষে ঢাকা নিয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট সে মারা যায়। মামলার বাদী তার আবেদনে আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সে একজন সক্রিয় কর্মী ছিল। সে নিহত হওয়ায় ‘গণঅভ্যুত্থানের শহিদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রকাশিত তালিকায় ২০ নম্বর ক্রমিকে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইমতিয়াজ শহীদের মর্যাদা পেয়ে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ১০ লাখ টাকার চেক পাওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চাটখিল উপজেলার প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম তার চেক পাওয়ার ঘটনা শুনে তখন তারা ইমতিয়াজ আত্মঘাতি গুলিতে মারা গেছে বলে জানান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার কোন ভূমিকা ছিল না। এই মর্মে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তারা, এ অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম অভিযোগ দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
তৎকালীন চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের শহীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যাচাই-বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম বাদ পড়েছে।
এই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, গেজেট নিয়ে আপত্তি থাকায় আমরা ইমতিয়াজের বিষয়টি তদন্ত করছি। তার সব সুযোগ সুবিধা আপাতত বন্ধ আছে। জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা তাকে ছাড়া বাকি সবাইকে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এই ব্যাপারে চাটখিল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আদালতের কোনো চিঠি আমি পাইনি। যদি পাই তাহলে আদালতের আদেশ প্রাপ্তি সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে ৯ মাস পর হাবিবুর রহমান পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে আদালতে এ অভিযোগ করেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ চাটখিলের সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, থানার লুট হওয়া অস্ত্রে আত্মঘাতি গুলিতে সে আহত হয়ে মারা গেছে।